অদেখা সেতু

গল্প: অদেখা সেতু


**ভূমিকা**


ভালোবাসা, এক আশ্চর্য অনুভূতি। এটি মানুষের জীবনের প্রাথমিক অনুভূতিগুলোর মধ্যে একটি, যা আমাদের হাসায়, কাঁদায় এবং কখনো কখনো হতাশ করে। এই গল্পটি দুটি মানুষের জীবনকে কেন্দ্র করে, যারা ভালোবাসার জন্য লড়াই করে। তাদের নাম আকাশ এবং নীলা।

**প্রথম পরিচয়**

একবার এক ছোট শহরে আকাশ নামে একজন তরুণ ছিল। সে পড়াশোনায় ভালো ছিল এবং তার স্বপ্ন ছিল একজন সফল প্রকৌশলী হওয়া। নীলার সঙ্গে তার পরিচয় হলো কলেজে। নীলা ছিল একটি উজ্জ্বল এবং প্রাণবন্ত মেয়ে। তার চোখে স্বপ্নের ঝিলিক, আর হাসিতে ছিল একটি অনন্য কৌতূহল।

একদিন, কলেজের ক্যান্টিনে আকাশ এবং নীলা প্রথম দেখা করে। নীলা তখন বই পড়ছিল, এবং আকাশ তার পছন্দের কফি অর্ডার করছিল। নীলা যখন বই থেকে চোখ তুলে আকাশের দিকে তাকালো, তখন তাদের মধ্যে একটি অদ্ভুত আকর্ষণ তৈরি হলো।

“তুমি কি বইয়ের পোকা?” আকাশ হাসতে হাসতে বলল।

নীলা একটু লজ্জা পেয়ে বলল, “হ্যাঁ, বই পড়াই আমার সবচেয়ে ভালোবাসার কাজ।”

এভাবে তাদের কথোপকথন শুরু হলো। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে উঠতে লাগল, যা পরে ভালোবাসায় পরিণত হলো।

**ভালোবাসার শুরু**


সময়ের সাথে সাথে আকাশ ও নীলার সম্পর্ক গভীর হতে লাগল। তারা একসাথে সময় কাটাত, সিনেমা দেখতে যেত, পার্কে হাঁটত এবং একে অপরের স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা শেয়ার করত। নীলা একবার আকাশকে বলল, “তুমি জানো, আমি মনে করি ভালোবাসা একটি অদেখা সেতুর মতো। এটি দুই হৃদয়কে একত্রিত করে, যদিও কখনো কখনো এটি খুব দুর্বল হয়।”

আকাশ নীলার কথায় সম্মতি জানিয়ে বলল, “ঠিক বলেছ। ভালোবাসা সত্যিই একটি শক্তিশালী অনুভূতি, কিন্তু এটিকে ধরে রাখতে হয়।” 

**চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি**


কিন্তু জীবন খুব মসৃণ ছিল না। একদিন নীলার বাবা-মা তার জন্য একটি পছন্দের ছেলে খুঁজে পেয়েছেন। নীলা এই খবর শুনে অসহায় বোধ করল। সে তার বাবা-মাকে বলল, “আমি কাউকে বিয়ে করতে চাই না, আমি আকাশকে ভালোবাসি।”

কিন্তু নীলার বাবা-মা এটিকে গুরুত্ব দেননি। তারা তাদের পছন্দের পাত্রের জন্য চাপ দিতে শুরু করলেন। নীলা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ল। একদিকে তার পরিবার, অন্যদিকে তার ভালোবাসা।

নীলা আকাশকে এই বিষয়টি জানাল। আকাশ বলল, “আমাদের ভালোবাসা যদি সত্যিই শক্তিশালী হয়, তবে আমরা এই বাধা অতিক্রম করতে পারব।” 


কিন্তু নীলা জানত, পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে। তাদের ভালোবাসার জন্য তারা লড়াই করতে হবে।

**ভালোবাসার সংগ্রাম**


দিনগুলো কেটে যেতে লাগল, এবং নীলা তার পরিবারকে মেনে নিতে বাধ্য হলো। একদিন, সে আকাশের সঙ্গে দেখা করতে গেল। তাদের মধ্যে একটি অনুভূতির টান ছিল। নীলা বলল, “আমি চাই, আমাদের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে। কিন্তু আমি জানি, আমার পরিবার এ নিয়ে কিছু বলবে।”

আকাশ জানাল, “আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করব, নীলা। ভালোবাসা কখনো হারায় না।” 


কিন্তু বাস্তবতা তাদের মধ্যে একটি ব্যবধান সৃষ্টি করছিল। নীলা একদিকে পরিবারকে সম্মান করতে চাইছিল, অন্যদিকে তার ভালোবাসাকে ধরে রাখতে চেয়েছিল।


**অন্তিম বিচ্ছেদ**


সময় অতিবাহিত হচ্ছিল। একদিন নীলা তার পরিবারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে আকাশের সঙ্গে দেখা করতে গেল। তারা একটি সুন্দর জায়গায় বসে ছিল। নীলা বলল, “আমার বাবা-মা আমাকে অন্য পাত্রের সাথে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছেন। আমি তাদের কথা শুনতে বাধ্য।”

আকাশের চোখে জল এসে গেল। সে বলল, “আমাদের ভালোবাসা সত্যিই শক্তিশালী, কিন্তু যদি তুমি প্রস্তুত না হও, তবে আমাকে তোমাকে ছেড়ে যেতে হবে।” 


নীলা অশ্রুসজল চোখে বলল, “কিন্তু আমি তোমাকে ভালোবাসি, আকাশ।”


তাদের মধ্যে একটি দীর্ঘ নীরবতা বয়ে গেল। শেষমেশ, নীলা বলল, “আমার পরিবারের সম্মান রক্ষা করতে হবে। আমি তোমার সঙ্গে বাঁচতে পারব না।”

এভাবে তারা একে অপরকে বিদায় জানিয়ে চলে গেল। দুই হৃদয়ে একটি বিরাট শূন্যতা তৈরি হলো। 


**জীবনের নতুন অধ্যায়**


কিছু দিন পর, নীলা তার পরিবারের পছন্দ অনুযায়ী বিয়ে করল। অন্যদিকে, আকাশ তার পড়াশোনায় মনোযোগী হল। কিন্তু তার মন সবসময় নীলার দিকে ফিরে আসত। সে জানত, ভালোবাসা এত সহজে মুছে যায় না। 

নীলার জীবনও সুখী ছিল না। তিনি প্রতিদিন আকাশের কথা ভাবতেন, এবং তার হাসি ও কথা মনে পড়ে। কিন্তু তিনি জানতেন, পরিবারকে সম্মান করা তার দায়িত্ব।


**আশ্চর্য পুনর্মিলন**


দুই বছর পর, একটি অনুষ্ঠানে নীলা এবং আকাশের পুনর্মিলন হলো। তারা যখন একে অপরকে দেখল, তাদের মনে পুরনো স্মৃতির ঝড় উঠল। নীলা বলল, “আমি তোমাকে ভুলিনি, আকাশ। তুমি সবসময় আমার হৃদয়ে আছ।”

আকাশ হাসতে হাসতে বলল, “আমিও। কিন্তু আমাদের জীবনের পাথেয় এখন ভিন্ন। আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে।”


তবে তারা বুঝতে পারল, তাদের মধ্যে এখনও একটি গভীর ভালোবাসা বয়ে চলছে। তাদের মধ্যে একটি সেতু ছিল, যা সময় ও দূরত্বকে অতিক্রম করেছে। 

**শেষ কথা**


শেষ পর্যন্ত, নীলা এবং আকাশের জীবন আবার মিলিত হলো। তারা বুঝতে পারল, ভালোবাসা কখনো মরে না। এটি কেবল পরিবর্তিত হয় এবং জীবন যেখানে নেয়, সেখানে চলে যায়। তারা একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে বলল, “ভালোবাসা সত্যিই একটি অদেখা সেতু, যা আমাদের হৃদয়কে একত্রিত করে।”

nativ

### উপসংহার


ভালোবাসা শক্তিশালী একটি অনুভূতি, যা মানুষের জীবনকে রঙিন করে। কখনো কখনো এটি সংগ্রামের মাধ্যমে যায়, কিন্তু সত্যিকারের ভালোবাসা কখনো হারিয়ে যায় না। এটি আমাদের জীবনে একটি আশার সেতু তৈরি করে, যা আমাদেরকে একসাথে বেঁধে রাখে।

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post