সূর্যের হাসি পর্ব পঞ্চম

 বনের মাঝে রোদ

একটা সময় ছিল যখন রাকা খুব কমই বাড়ির বাইরে বের হতো। সে ছিল একটু ভীতু স্বভাবের, বিশেষ করে বনের গভীরতা তাকে খুব ভয় দেখাতো। কিন্তু একদিন, তার দাদী তাকে একটি গল্প শোনালেন, যা তার মনোভাব পুরোপুরি বদলে দিল।


দাদী বললেন, “বনের গভীরে এক রহস্যময় রোদ আছে, যেটা দেখতে হলে তোমাকে সাহসী হতে হবে। সেই রোদ যখন বনের গাছের ফাঁক দিয়ে ছড়িয়ে পড়ে, তখন বনটা এক অদ্ভুত সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে যায়। সেই রোদকে যদি তুমি খুঁজে পেতে পারো, তাহলে তুমি প্রকৃতির সেরা সৌন্দর্য দেখতে পাবে।”


রাকার কৌতূহল বাড়ল। সে ভাবল, “বনের মাঝখানে যদি এমন কোনো জায়গা থাকে, যেখানে রোদ একদম অন্যরকম হয়ে ওঠে, তাহলে সেটা দেখতে হবে।” 


একদিন সকালে, সাহস সঞ্চয় করে রাকা বেরিয়ে পড়ল বনের দিকে। তার মনে কিছুটা ভয় ছিল, কিন্তু দাদীর গল্প তাকে বনের রহস্যময় রোদের খোঁজে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। 


বনের প্রান্তে পৌঁছানোর পর, রাকা দেখল গাছের ছায়া সবকিছু ঢেকে রেখেছে। পাখিরা গাছের ডালে বসে গান গাইছে, আর বাতাসের মৃদু সুর বনের মধ্যে বাজছে। রাকা বনের মধ্যে ঢুকে পড়ল, কিন্তু তার চারপাশ এত ঘন ছিল যে রোদ কোথাও দেখতে পেল না।


সে গাছপালা আর ঝোপঝাড়ের মধ্যে দিয়ে হাঁটতে লাগল, আর ধীরে ধীরে বনের গভীরে প্রবেশ করল। যতই সে এগিয়ে যেতে লাগল, ততই গাছের ছায়া ঘন হতে লাগল, এবং রোদ যেন আরো দূরে সরে যেতে লাগল। 


কিছুক্ষণ পর, রাকা একটা খোলা জায়গায় পৌঁছাল। সেই জায়গাটা ছিল বনের মাঝে এক ছোট্ট খোলা মাঠ। আশেপাশের বিশাল গাছগুলো একে ঘিরে রেখেছে, কিন্তু মাঠের মাঝখানে সূর্যের আলো সরাসরি পড়ছে। 


রাকা সেই আলোয় দাঁড়িয়ে মুগ্ধ হয়ে গেল। সূর্যের রোদ গাছের ফাঁক দিয়ে সরাসরি সেই ছোট্ট মাঠে পড়ে জ্বলজ্বল করছে। রাকা এই সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে গেল, এবং দাদীর কথার সত্যতা বুঝতে পারল। 


রাকা সেই রোদে হাত বাড়িয়ে বলল, “তুমি কি আমার জন্য এখানে অপেক্ষা করছিলে? তোমার সৌন্দর্য সত্যিই মনোমুগ্ধকর।” 


রোদ যেন তার উত্তরে রাকার শরীর জুড়ে উষ্ণতার পরশ বুলিয়ে দিল। রাকা বনের সেই রহস্যময় রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে অনুভব করল, প্রকৃতির সাথে একাত্ম হয়ে গেছে। 


সে সেই খোলা মাঠে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রোদে স্নান করল। রোদ তার শরীর আর মনকে উষ্ণ করে তুলল, আর রাকার মনে হলো, সে প্রকৃতির সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্তের সাক্ষী হয়েছে। 


রোদে দাঁড়িয়ে সে আরও ভাবল, “বনটা তো এত ভয়ের কিছু নয়। বরং এখানে এমন এক শান্তি আর সৌন্দর্য আছে, যা আমি আগে কখনও দেখিনি।” 


এরপর থেকে রাকার মনে আর বনের প্রতি কোনো ভয় রইল না। সে প্রায়ই বনের সেই জায়গায় যেত, যেখানে সে রোদ আর প্রকৃতির সান্নিধ্য পেত। 


বনের রোদ তার জন্য শুধু একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নয়, বরং একটি আশ্রয়স্থল হয়ে উঠল, যেখানে সে নিজের সাথে সময় কাটাতে পারত। 


প্রতিবার বনের মাঝে এসে সে সেই রোদের উষ্ণতার মধ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলত, আর বনের মধ্যে নতুন করে জীবন খুঁজে পেত। 


এইভাবেই, রাকা বনের মাঝে রোদ খুঁজে পেল এবং তার সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তুলল। বনের রোদ তার জীবনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল, যা তাকে প্রকৃতির আরও কাছাকাছি নিয়ে এল। 


রাকা শিখল, প্রকৃতির গভীরে এমন অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে, যা আমাদের শুধু দেখতে জানতে হয়। আর এই রহস্যগুলোই আমাদের জীবনে নতুন সৌন্দর্য এবং আনন্দ নিয়ে আসে।

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post