সূর্যের হাসি সপ্তম পর্ব

 

সপ্তম পর্ব 

নীল আকাশের নীচে

গ্রামের নাম ছিল শান্তিপুর, আর সেই গ্রামের সবচেয়ে প্রিয় জায়গা ছিল ছোট্ট একটা মাঠ, যেখানে শিশু থেকে বৃদ্ধ, সবাই এসে বসে আড্ডা দিত। আর সেই মাঠের ওপর ছড়িয়ে থাকত বিশাল এক নীল আকাশ। রোজ বিকেলে, সেই আকাশের নিচে খেলার মেলা বসত, আর সবার মন ভরে যেত আনন্দে।


রাকা ছিল সেই গ্রামেরই এক ছোট্ট মেয়ে। তার সবচেয়ে প্রিয় কাজ ছিল বিকেল বেলায় মাঠে গিয়ে নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা। সে আকাশের দিকে তাকিয়ে মেঘেদের নানা রূপ দেখে গল্প কল্পনা করত। কখনও সে মেঘেদের ভেতরে বিশাল রাজপ্রাসাদ দেখতে পেত, আবার কখনও মেঘেরা একেকটা অদ্ভুত প্রাণীতে পরিণত হতো তার কল্পনায়।

একদিন বিকেলে, রাকা তার বন্ধুদের সাথে মাঠে গিয়ে বসেছিল। তারা সবাই নীল আকাশের নিচে বসে একে অপরের সাথে গল্প করছিল। হঠাৎ রাকা আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, “দেখো, আজ আকাশটা যেন আরও নীল দেখাচ্ছে!”


তার বন্ধুরা সবাই আকাশের দিকে তাকাল। সত্যিই, আকাশের নীল রংটা আজ যেন আরও গভীর, আরও উজ্জ্বল। মেঘগুলোও যেন খুব সুন্দরভাবে ছড়িয়ে আছে, যেন কেউ আকাশে তুলোর রাশি ছিটিয়ে দিয়েছে।


রাকার বন্ধু মিতা বলল, “রাকা, তুমি কি কখনও ভেবেছো, আকাশের ওপাশে কি আছে? নীল আকাশের ওপাশে কি আমাদের মতো আরও কেউ আছে?”

রাকা একটু হাসল এবং বলল, “কেন নয়? আমি ভাবি, নীল আকাশের ওপাশে হয়তো অন্য কোনো দুনিয়া আছে, যেখানে আমাদের মতোই কেউ বসবাস করে। আর তারাও হয়তো আকাশের দিকে তাকিয়ে আমাদের মতোই ভাবছে।”


এই কথায় সবাই মুগ্ধ হয়ে গেল। তারা সবাই একসাথে আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজেদের কল্পনার ডানায় ভেসে বেড়াতে লাগল। 


রাকা তখন ভাবল, “নীল আকাশ আমাদের কল্পনার সীমানা ছাড়িয়ে আরও অনেক কিছু নিয়ে আসে। আমরা শুধু তার দিকে তাকিয়ে যা কিছু কল্পনা করতে পারি, সেটাই আমাদের জন্য সত্যি হয়ে ওঠে।”


এরপর থেকে, রাকা প্রতিদিন নীল আকাশের নিচে বসে তার বন্ধুদের সাথে নতুন নতুন কল্পনার গল্প বানাতে লাগল। তারা সবাই মিলে আকাশের মেঘগুলোকে নানা আকারে সাজিয়ে নিজেরা নতুন নতুন গল্প তৈরি করত। 


কেউ বলত, মেঘগুলো একেকটা ভেলায় চড়ে অন্য কোনো দেশে যাচ্ছে। আবার কেউ বলত, মেঘগুলো আসলে বিশাল কোনো প্রাণীর দল, যারা আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে। 

রাকা তার বন্ধুদের সাথে প্রতিদিন আকাশের নীচে বসে এভাবেই গল্প তৈরি করত, আর তাদের কল্পনার ডানায় ভেসে বেড়াত। তারা শিখেছিল, নীল আকাশের নিচে বসে কল্পনা করতে পারলে, সেই কল্পনাই তাদের বাস্তবের চেয়েও বেশি আনন্দ দেয়।


এভাবেই, রাকা এবং তার বন্ধুরা নীল আকাশের নিচে এক নতুন জগৎ তৈরি করেছিল, যেখানে তারা নিজেদের কল্পনার রাজ্যে বসবাস করত। আকাশের নীল রং তাদের জন্য শুধু একটা রং ছিল না, বরং সেটা ছিল তাদের কল্পনার এক বিশাল ক্যানভাস। 

রাকা বুঝতে পারল, নীল আকাশের নিচে বসে আমরা সবাই যদি আমাদের কল্পনাকে উন্মুক্ত করতে পারি, তাহলে আমাদের জীবন আরও সুন্দর হয়ে উঠবে। 


এইভাবেই, নীল আকাশের নিচে রাকার দিনগুলো কাটতে লাগল। প্রতিদিন সে নতুন কিছু শিখত, নতুন কিছু কল্পনা করত, আর সেই কল্পনা তার জীবনকে আরও রঙিন করে তুলত।

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post