সূর্যের হাসি দ্বিতীয় পর্ব

দ্বিতীয় অধ্যায়:

**সূর্যদেবের রাজ্যে**

রাকা সূর্যদেবের রাজ্যে পৌঁছানোর পর থেকেই এক নতুন জগতের সন্ধান পেল। সূর্যদেবের রাজ্য যেন এক রঙিন স্বপ্নের দেশ, যেখানে সবকিছুই আলোর মায়ায় মোড়ানো। পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে রাকা দেখল, নিচের দিকে বিশাল এক সোনালী শহর, যেখানে সবকিছুই যেন সোনার মত উজ্জ্বল। আকাশে রঙিন মেঘগুলো যেন সোনা আর রূপার সাথে খেলছে, আর প্রতিটি বৃক্ষের পাতায় সূর্যের কিরণ এসে পড়ে তাদেরকে আরও উজ্জ্বল করে তুলেছে।


রাকা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল, কখনও সে এমন কিছু দেখেনি। তার মনে হচ্ছিল সে যেন এক স্বপ্নের মধ্যে চলে এসেছে। কিন্তু এটা কোনো স্বপ্ন নয়, বরং বাস্তব, এক বিশেষ বাস্তবতা যেখানে শুধু আলো আর আনন্দের রাজত্ব। 

সূর্যদেব মৃদু হেসে রাকার দিকে তাকিয়ে বললেন, "তুমি আমার রাজ্যে এসেছো, রাকা। এখানে সবকিছুই আলোর স্পর্শে গড়ে উঠেছে, আর প্রতিটি মুহূর্তই এখানে নতুন।"

রাকা সূর্যদেবের কথায় মুগ্ধ হয়ে বলল, "এখানকার সবকিছুই এত সুন্দর! এটা কি আসলেই সত্যি?"

সূর্যদেব বললেন, "এটা সত্যিই, তবে এই সৌন্দর্য শুধু এখানে সীমাবদ্ধ নয়। এই সৌন্দর্য পৃথিবীর প্রতিটি জায়গায় রয়েছে, শুধু সেটা দেখতে জানতে হয়।"

রাকা সূর্যদেবের কথাগুলো শুনে ভাবতে লাগল। সে বুঝতে পারল, পৃথিবীর সবকিছুর মধ্যেই আলোর স্পর্শ আছে, কিন্তু সেই আলোকে সঠিকভাবে দেখতে পারাটাই আসল বিষয়। 

সূর্যদেব রাকাকে নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে লাগলেন। প্রথমেই তারা গেলেন একটি বিশাল বাগানে, যেখানে রঙিন ফুলগুলো সূর্যের কিরণে আলোকিত হয়ে উঠছে। এই ফুলগুলো শুধু দেখতে সুন্দর নয়, বরং তাদের থেকে এক আশ্চর্য মিষ্টি গন্ধও ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। রাকা সেই গন্ধে মুগ্ধ হয়ে বলল, "এই ফুলগুলো কি যাদুকরী?"

সূর্যদেব হাসলেন এবং বললেন, "এরা যাদুকরী নয়, তবে এদের মধ্যে জীবনের সব সৌন্দর্য রয়েছে। তারা সূর্যের আলো থেকে তাদের রঙ আর সৌন্দর্য পেয়েছে, আর সেই আলোকেই তারা আবার পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিচ্ছে।"

রাকা আরও জানতে চাইলো, "এদের সৌন্দর্য কিভাবে রক্ষা করা যায়?"

সূর্যদেব বললেন, "যখন আমরা প্রকৃতিকে ভালোবাসি এবং তার যত্ন নেই, তখনই এর সৌন্দর্য রক্ষা পায়। আমাদের প্রতিটি কাজ, প্রতিটি পদক্ষেপে যদি আমরা প্রকৃতির প্রতি দায়িত্বশীল হই, তাহলে এই সৌন্দর্য চিরকাল রক্ষা পাবে।"

এরপর সূর্যদেব রাকাকে নিয়ে গেলেন এক বিশাল ঝর্ণার কাছে। ঝর্ণার পানিগুলো সূর্যের আলোতে রঙিন হয়ে ঝরে পড়ছিল, আর সেই পানির ধারা পাহাড়ের গা বেয়ে নিচের দিকে গড়িয়ে পড়ছিল। ঝর্ণার পানি এতই স্বচ্ছ যে রাকা তার নিজের প্রতিচ্ছবি সেই পানিতে স্পষ্ট দেখতে পেল। 


ঝর্ণার সামনে দাঁড়িয়ে সূর্যদেব বললেন, "এই ঝর্ণা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, জীবন যেমন প্রবাহমান, তেমনি আমাদের চিন্তা, আমাদের মননও সবসময় এগিয়ে চলা উচিত। কোনো অবস্থায় স্থবির হয়ে থাকা উচিত নয়।"

রাকা সূর্যদেবের কথাগুলো মনে গেঁথে নিল। সে বুঝতে পারল, জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই এক নতুন সম্ভাবনা। 

তারা তারপর এক পাহাড়ের চূড়ায় উঠল, যেখানে থেকে পুরো রাজ্যটা দেখা যাচ্ছিল। সূর্যদেব রাকাকে বললেন, "দেখো, এই রাজ্য শুধু আমার নয়, এটা আমাদের সকলের। এখানে প্রতিটি প্রাণ, প্রতিটি গাছ, প্রতিটি পাখি এই আলোর অংশ। আমরা সবাই এই আলো থেকে শক্তি পাই, আর সেই শক্তি দিয়ে আমরা আমাদের জীবন গড়ে তুলি।"

রাকা বলল, "এই আলোর শক্তি কি আমাদের সবার মধ্যেই আছে?"

সূর্যদেব সম্মতি জানিয়ে বললেন, "হ্যাঁ, প্রত্যেকের মধ্যেই এই আলোর শক্তি আছে। কিন্তু সবাই সেটা অনুভব করতে পারে না। কেউ কেউ আলোর দিকে তাকিয়ে দেখতে জানে, কেউ কেউ জানে না। কিন্তু যারা দেখে, তাদের জীবনে সবসময় আলো থাকে, আর সেই আলো তাদের পথ দেখায়।"

রাকা বুঝতে পারল, সূর্যদেব আসলে তাকে এক গভীর সত্যি শিখিয়েছেন। জীবন শুধু বাইরে যা দেখা যায় তা নয়, বরং ভিতরে যে আলো আছে সেটাই আসল শক্তি। 

তারপর সূর্যদেব রাকাকে নিয়ে গেলেন এক বিশেষ স্থানে, যেখানে সূর্যের রশ্মি সোনালী আলোর ধারা তৈরি করেছিল। সেই ধারা দিয়ে রাজ্যের সবকিছুই আলোকিত হচ্ছিল। সূর্যদেব বললেন, "এটাই সেই জায়গা, যেখানে সমস্ত আলোর উৎপত্তি। এখান থেকে সূর্যের প্রতিটি কিরণ পৃথিবীতে পৌঁছায়, আর সেই কিরণ আমাদের সকলকে আলোকিত করে।"

রাকা আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে রইল। সে দেখল, সূর্যদেবের রাজ্যে সবকিছুই আলোর মধ্যে রয়েছে, আর সেই আলোর মধ্যে এক ধরনের শান্তি ও সৌন্দর্য রয়েছে। 

সূর্যদেব বললেন, "এই আলো আমাদের মধ্যে সাহস, ভালোবাসা, এবং করুণার শক্তি দেয়। যখন আমরা এই শক্তিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করি, তখন আমাদের জীবন সুন্দর হয়।"

রাকা ধীরে ধীরে সূর্যদেবের কথার গভীরতা বুঝতে পারল। সে জানত যে তার সামনে এখনও অনেক কিছু শিখতে হবে, কিন্তু সে এক নতুন জ্ঞান এবং শক্তি নিয়ে ফিরবে, যা তাকে এবং তার চারপাশের মানুষদের জীবনে আলো ছড়াবে।

সূর্যদেব রাকার মাথায় হাত রেখে বললেন, "তুমি যে জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা পেয়েছো, সেটা তোমার জীবনের জন্য একটি উপহার। এই উপহারকে তুমি যখন সঠিকভাবে ব্যবহার করবে, তখন তুমি নিজেই আলোর এক অংশ হয়ে উঠবে।"

রাকা সূর্যদেবকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলল, "আমি বুঝতে পেরেছি, এই আলোর শক্তি আমাদের সবার মধ্যেই আছে। আমি চেষ্টা করব এই আলোকে সবসময় ধরে রাখতে।"

সূর্যদেব মৃদু হাসলেন এবং বললেন, "তুমি ঠিকই বলেছো। যাও, এই আলোকে পৃথিবীতে ছড়িয়ে দাও, এবং সবাইকে জানিয়ে দাও যে, সূর্যের আলো শুধু আমাদের চারপাশে নয়, আমাদের হৃদয়েও রয়েছে।"

রাকা সূর্যদেবের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিচের দিকে নামতে শুরু করল। তার মন এক নতুন আলোর স্পর্শে উজ্জ্বল হয়ে উঠল, আর সে জানত, এই আলোর যাত্রা এখনও শেষ হয়নি, বরং এটা শুধু শুরু।

এইভাবেই, সূর্যদেবের রাজ্যে রাকা তার জীবনের এক নতুন দিশা খুঁজে পেল। সে জানত, এই জ্ঞান, এই আলো তাকে তার জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে সাহায্য করবে, আর সে নিজেই সেই আলোর এক অংশ হয়ে উঠবে।

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post