সূর্যের হাসি তৃতীয় পাঠ

 

**রঙিন সকাল**

রাকা সূর্যদেবের রাজ্য থেকে ফিরে আসার পর থেকেই তার জীবন বদলে গেল। প্রতিদিন সকালে সে নতুন উদ্যমে জেগে উঠে সূর্যের প্রথম আলোকে স্বাগত জানাত। সে জানত, প্রতিটি নতুন সকাল এক নতুন সুযোগের বার্তা নিয়ে আসে। 


একদিন সকালে, রাকা ঘুম থেকে উঠে তার জানালার বাইরে তাকাল। সে দেখল, চারপাশটা যেন আরও বেশি রঙিন হয়ে উঠেছে। আকাশে রঙিন মেঘগুলো সূর্যের আলোতে একেক রঙে ঝলমল করছে, পাখিরা তাদের রঙিন ডানায় উড়ে বেড়াচ্ছে, আর ফুলগুলো যেন আরও বেশি রঙিন আর মিষ্টি সুবাস ছড়াচ্ছে। 


রাকা ভাবল, "আজকের সকালটা এত রঙিন কেন? এটা কি শুধুই প্রকৃতির খেলা, নাকি এর মধ্যে লুকিয়ে আছে কোনো বিশেষ রহস্য?"

সে ভাবল, যদি সে এই রহস্যের সন্ধান করতে পারে, তাহলে সে জানতে পারবে, কীভাবে এই রঙিন সকাল তৈরি হয়। তাই সে তার ছোট্ট ব্যাগে কিছু খাবার আর পানি নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। 


রাকা প্রথমে গেলো সেই বনের পথে, যেখানে সে আগেও গিয়েছিল। বনের মধ্যে ঢুকে সে দেখল, প্রতিটি গাছের পাতা সূর্যের আলোতে একেক রঙে ঝলমল করছে। সেই গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে রাকা ভাবল, "এই রঙিন আলো কীভাবে তৈরি হয়?" 


এমন সময়ে, সে একটা ছোট্ট তিতির পাখিকে দেখতে পেলো, যা তার দিকে উড়ে আসছে। তিতিরটি রাকার কাঁধে বসে বলল, "তুমি কি জানতে চাও, কেন আজকের সকালটা এত রঙিন?"


রাকা অবাক হয়ে তিতিরের দিকে তাকিয়ে বলল, "হ্যাঁ, আমি জানতে চাই। তুমি জানো?"


তিতির মৃদু হেসে বলল, "আমি জানি। আজকে সূর্যদেবের রাজ্যে একটা বিশেষ অনুষ্ঠান হচ্ছে, যেখানে সব রঙ একত্রিত হয়ে পৃথিবীকে রাঙিয়ে তুলছে।"


রাকা মুগ্ধ হয়ে তিতিরের কথা শুনল। সে ভাবল, "তাহলে আজকের সকালটা সত্যিই বিশেষ। আমি কি সেই অনুষ্ঠানে যেতে পারি?"


তিতির বলল, "তুমি অবশ্যই যেতে পারো। তবে তোমাকে আগে আমাদের বনের রঙিন রাস্তা ধরে হাঁটতে হবে। এই রাস্তা তোমাকে সূর্যদেবের রাজ্যের সেই বিশেষ অনুষ্ঠানের দিকে নিয়ে যাবে।"


রাকা রাজি হলো এবং তিতির পাখির সাথে সেই রঙিন রাস্তায় হাঁটতে লাগল। রাস্তাটি ছিল এক আশ্চর্য সৌন্দর্যপূর্ণ পথ। গাছপালা, ফুল আর পাখিরা সবাই যেন এক মায়াবী আলোতে মোড়ানো ছিল। প্রতিটি পদক্ষেপে রাকা নতুন নতুন রঙ দেখতে পেল, যা সে আগে কখনও দেখেনি।



এই রঙিন পথে হাঁটতে হাঁটতে রাকা এক জায়গায় পৌঁছাল, যেখানে বিভিন্ন রঙের পানির ঝর্ণা ছিল। সেই পানির ফোঁটাগুলো সূর্যের আলোয় রঙিন হয়ে নিচের দিকে পড়ছিল। তিতির বলল, "এটা রঙিন ঝর্ণা, এখানে সূর্যের আলো রঙের সাথে মিশে এক আশ্চর্য রূপ তৈরি করে।"


রাকা সেই রঙিন ঝর্ণার সামনে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ হয়ে দেখল। সে তার হাত দিয়ে সেই ঝর্ণার পানিতে স্পর্শ করল, আর তার হাতে রঙিন পানির ছোঁয়া লাগলো। রাকা বুঝতে পারল, এই রঙিন পানি সূর্যের আলোকে প্রতিফলিত করে পৃথিবীকে রাঙিয়ে দেয়। 


এরপর তারা আরও দূরে এগিয়ে গেল। এবার তারা এক পাহাড়ের কাছে পৌঁছাল, যেখানে সূর্যের রশ্মি সরাসরি পড়ছে। সেই রশ্মি পাহাড়ের পাথরে এসে প্রতিফলিত হয়ে চারপাশের সবকিছু রঙিন করে তুলছে। রাকা পাহাড়ের চূড়ায় উঠে দেখল, নিচের দিকে বিশাল এক রঙিন মাঠ, যেখানে নানা রঙের ফুল ফুটে আছে।


তিতির বলল, "এই মাঠটা সূর্যদেবের প্রিয় জায়গা। এখানে তিনি প্রতিদিন বসে পৃথিবীর সৌন্দর্য উপভোগ করেন। এই জায়গায় সব রঙ একসাথে মিলে এক রঙিন সকাল তৈরি করে।"


রাকা মুগ্ধ হয়ে সেই রঙিন মাঠের দিকে তাকিয়ে রইল। সে বুঝতে পারল, এই রঙিন সকাল শুধু প্রকৃতির খেলা নয়, বরং এটি সূর্যদেবের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। এই সকাল পৃথিবীর সৌন্দর্যকে এক নতুন মাত্রা দেয়, আর সেই সৌন্দর্যই পৃথিবীকে আরও মধুর করে তোলে।


তিতির বলল, "তুমি যদি এই রঙিন সৌন্দর্যকে সঠিকভাবে অনুভব করতে পারো, তাহলে তোমার জীবনও হবে রঙিন। এই রঙের মধ্যে লুকিয়ে আছে আনন্দ, ভালোবাসা, আর একতা।"


রাকা তিতিরের কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে বলল, "আমি এই রঙকে অনুভব করতে চাই, আর আমি চাই এই রঙ আমার জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ুক।"


তিতির মৃদু হেসে বলল, "তাহলে তুমি তোমার হৃদয়কে এই রঙিন সৌন্দর্যের দিকে খুলে দাও। প্রতিদিনের সূর্যোদয়ে তুমি এই রঙের ছোঁয়া পাবে, আর সেটাই তোমার দিনকে রাঙিয়ে দেবে।"


রাকা সেই রঙিন সকালে একটি নতুন অনুভূতি নিয়ে বাড়ি ফিরে এল। সে জানত, এই রঙিন সকাল শুধু একটি দিন নয়, বরং এটা তার জীবনের প্রতিটি দিনের জন্য একটি নতুন বার্তা। 


রাকাকে প্রতিদিন নতুন রঙের সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেখা যেত, সে প্রতিদিন তার আশেপাশের মানুষদের এই রঙের কথা বলত। সে তাদের বলত, "প্রতিদিনের সূর্যোদয়ে এই রঙের স্পর্শ আছে, যা আমাদের জীবনকে আরও সুন্দর করে তোলে। শুধু আমাদের সেটা দেখতে জানতে হয়।"


এভাবেই, রাকার জীবন আরও রঙিন হয়ে উঠল, আর সে এই রঙিন সৌন্দর্যকে তার চারপাশের সবার সাথে ভাগাভাগি করতে লাগল। সে জানত, এই রঙের মধ্যে লুকিয়ে আছে জীবনের আসল সৌন্দর্য, যা শুধু দেখতে জানতে হয়।


এইভাবে, প্রতিদিনের রঙিন সকাল রাকার জীবনে এক নতুন অর্থ নিয়ে আসতে লাগল। সে বুঝতে পারল, সূর্যের আলো শুধু আলোকিত করে না, বরং তা জীবনের প্রতিটি কোণায় রঙের ছোঁয়া দিয়ে সবকিছুকে সুন্দর করে তোলে। আর সেই সৌন্দর্যই পৃথিবীকে আরও মধুর করে তোলে, যা সবার জন্য এক অসীম আনন্দের উৎস।

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post